প্রথমে পরমহংস মশাই সাধারণ লোকের মতো তক্তাপোশের উপর জাজিমে বসিতেন; কিন্তু তিনি কয়েক বার আসিবার পর তাঁহার বসিবার জন্য একখানি বিলাতী গালিচা হইল একটি তাকিয়াও হইল। এই গালিচাখানিতে শুধু তিনিই বসিতেন, অপর কেহ বসিত না; তাকিয়াটিও অপর কেহ ব্যবহার করিত না। তিনি আসিয়া চলিয়া যাইলে এগুলি আলাদা করিয়া তুলিয়া রাখা হইত। একটি কাঁচের গেলাসও হইল; সেইটিতে জল দিয়া তাঁহার ডান হাতের কাছে বটুয়ার নিকট রাখা হইত। গরমিকাল এইজন্য পিছন হইতে একখানি এড়ানী পাখা দিয়া পরমহংস মশাইকে বাতাস করা হইত। ঘরের ভিতর যে যাহার নিজ নিজ স্থানে আসিয়া বসিতেন। লোকসংখ্যা অধিক হওয়ায় কেহ ঘরের সম্মুখে দালানে বেঞ্চি পাতিয়া কেহ বা রাস্তার ধারে রকটিতে অথবা রাস্তায় বেঞ্চি পাতিয়া বসিতেন; কারণ সকলের বসিবার জায়গা ঘরটির ভিতর হইত না।
ক্রমে ক্রমে স্ত্রীলোকেরাও পরমহংস মশাইকে দেখিতে আসিতে লাগিলেন। আমার মা-ও যাইতেন। বৈঠকখানার দক্ষিণ দিকে যে ছোট দালানটি ছিল সেইখানে মেয়েরা বসিতেন। মেয়েদের সংখ্যা তিরিশ চল্লিশ হইত; মেয়েরা যেদিকে বসিতেন, সেদিকে আলো দেওয়া হইত না। মাঝখানকার জানালা দুটির কবাট খোলা থাকিত, এবং পরমহংস মশাই-এর বসিবার জায়গা একটু জানালার দিক অর্থাৎ দক্ষিণ-পশ্চিম দিক করিয়া হইত। এইরূপ ব্যবস্থায়, স্ত্রীলোকেরা পরমহংস মশাইকে দেখিতে পাইতেন ও তাঁহার সকল কথা শুনিতে পাইতেন; কিন্তু সেখানে আলো না দেওয়ায়, ঘরের ভিতর হইতে কেহ মেয়েদের দেখিতে পাইত না। এই ছিল বসিবার বন্দোবস্ত। চিক বা পর্দা দিবার আবশ্যক হইত না।
রামদাদার অসুখের জন্য তামাকের কোনো বন্দোবস্ত ছিল না, তাহা পূর্বে বলিয়াছি। তামাক খাওয়ার ব্যবস্থা না থাকার আরো একটি কারণ ছিল, পরমহংস মশাই-এর সম্মুখে কেহ তামাক খাইত না। পান দেওয়ারও কোনো ব্যবস্থা ছিল না; কারণ এখন যেমন বাড়িতে অভ্যাগত আসিলে পান দেওয়া হয়, তখন তেমন পান দেওয়ার রীতিই ছিল না।
No comments:
Post a Comment