পরমহংস মশাই কিছু দিন আসিতে থাকিলে পর, রামদাদা একটি কীর্তনগায়ক ছেলেকে ভাড়া করিয়া লইয়া আসিলেন। ছেলেটির বয়স আঠারো কি উনিশ বৎসর হইবে। বাহিরের কোনো গ্রামের ছেলে, কলিকাতার নয়। ছেলেটি কোমরে চাদর বাঁধিয়া হাত নাড়িয়া নাড়িয়া কি এক দূতীসংবাদ গাহিল। আমরা কলিকাতার লোক; এ রকম গান করিলে ঠাট্টা করিতাম ও ঘৃণা করিতাম। আমাদের এ সব গান ভাল লাগিত না। আর জোয়ান বেটাছেলে হইয়া মেয়েলি ঢঙে হাত নাড়া, আমরা কলিকাতার লোক হইয়া বড় দূষণীয় মনে করিতাম। আমার মনে হইল - এ ছোঁড়া পড়াশুনা করে না, কেবল মেয়েদের মতো হাত নেড়ে গান করে। এইজন্য আমি তাহার উপর বিরক্ত হইলাম, কারণ কলিকাতায় তখন জিম্ন্যাস্টিক করা ও কুস্তি করাই ছিল প্রথা। জোয়ান ছেলের মেয়েলি ঢঙে হাত নাড়া ও সখী-সংবাদ গান করা অতি হাস্যকর বলিয়া মনে হইল; কিন্তু দেখিলাম কেহ কিছু বলিল না। অনেকক্ষণ কীর্তন হইবার পর পরমহংস মশাই উপরে আহার করিতে যাইলেন, এবং কিছু পরে আমরাও ছাদের উপর আহার করিতে যাইলাম।
আহার করিয়া আমরা নীচে নামিয়া আসিলে অনেকেই তখন চলিয়া যাইতে লাগিলেন। পরমহংস মশাই-এর গাড়ি আসিতে দেরি ছিল, এইজন্য বাহিরের ঘরটিতে বসিয়া তিনি সেই কীর্তনগায়ক ছেলেটিকে, কি করিয়া হাত নাড়িতে হয়, কোমর বাঁকাইয়া দাঁড়াইতে হয়, প্রভৃতি শিখাইতেছিলেন। ছেলেটিও দু-চার বার কস্ত করিয়া তাহা অভ্যাস করিতে লাগিল। আমি দরজার কাছে তক্তাপোশে বসিয়া এ সকল দেখিতেছিলাম ও মনে মনে হাসিতেছিলাম।
সেই কীর্তনগায়ক ছেলেটির নাম জানি না, এবং তাহাকে আর কখনো দেখিয়াছি কিনা তাহাও স্মরণ নাই।
No comments:
Post a Comment