পরমহংস মশাই রামদাদার বাড়িতে এইরূপ বারকতক আসা-যাওয়া করাতে, পাড়ার লোকের তাঁহার প্রতি আর বিদ্বেষভাব কিছু রহিল না, কেহ উপহাসও করিত না। সকলেই তাঁহাকে একটু শ্রদ্ধার চোখে দেখিতে লাগিল। এখন হইতে জনসমাগমও কিছু অধিক হইতে লাগিল। তবে একটি বিশেষ লক্ষ্য করিবার বিষয় ছিল এই যে, এই ব্যাপারে কাহাকেও গিয়া নিমন্ত্রণ করা হইত না। সামাজিক কোনো কার্যে যেমন বাড়িতে গিয়া নিমন্ত্রণ করিতে হইত, তেমন করিতে হইত না। কেবল এই কথা বলিলেই হইত যে, অমুক দিন পরমহংস মশাই রামডাক্তারের বাড়িতে আসিবেন; তাহা হইলেই যাঁহারা পরমহংস মশাইকে শ্রদ্ধা-ভক্তি করিতেন, তাঁহারা সকলেই সন্ধ্যার সময় সেখানে যাইতেন। ক্রমে, চল্লিশ-পঞ্চাশ জন লোক হইতে এক শত বা দেড় শত লোক হইতে লাগিল।
এই সময় পাড়ার মহেন্দ্র গোসাঁই পরমহংস মশাই-এর সহিত এক দিন দেখা করিতে আসিলেন। তিনি পাড়ার প্রধান লোক ও গোস্বামী; এইজন্য, বৈঠকখানার দক্ষিণ দিকের জানালা দুইটির মাঝখানে, পরমহংস মশাই-এর ডান ধারে, একখানি আসন পাতিয়া তাঁহার বসিবার স্থান করিয়া দেওয়া হইল। পাড়ার মহেন্দ্র গোসাঁই আসিলেন, কিন্তু, কোনো ভট্টাচার্য ব্রাহ্মণ আসিতেন না; ইহা আমি বিশেষ করিয়া লক্ষ্য করিয়াছিলাম। পরমহংস মশাই ছিলেন মাড়েদের ঠাকুরবাড়ির পূজারী - মাহিষ্যদের পূজারী, তাহার উপর গলায় পইতা ছিল না; এইজন্য ভট্টাচার্য ব্রাহ্মণেরা তাঁহাকে প্রণাম করিতে রাজী ছিলেন না, আর এই কারণেই, ভট্টাচার্য ব্রাহ্মণেরা তাঁহার কাছে আসিতেন না। দক্ষিণেশ্বর ব্রাহ্মণপ্রধান গ্রাম। সেখানকার ব্রাহ্মণেরাও পরমহংস মশাইকে সেরূপ শ্রদ্ধার চোখে দেখিতেন না। কেবল যোগেন চৌধুরী1 একাই পরমহংস মশাই-এর নিকট আসিতেন। তখনকার দিনে জাত লইয়া এক ফেসাদ ছিল।
1. শ্রীযুত যোগীন্দ্রনাথ রায় চৌধুরী, উত্তরকালে স্বামী যোগানন্দ।↩
No comments:
Post a Comment