যুবা শশী1 যখন রামদাদার বাড়িতে আসিতে লাগিল, বোধ হয় তখন সে 'সেকেন্ড ইয়ার ক্লাস' এ পড়ে। দেখিতে কৃশ, রং ফরসা। গালে কোঁকড়ানো কোঁকড়ানো কিছু দাড়ি, লম্বা দাড়ি নয়। যুবা শশীকে দেখিতাম যে, নিবিষ্টমনে কান খাড়া করিয়া পরমহংস মশাই-এর পিছনে ডান দিকে বসিত। যদিও সে মনোযোগ দিয়া ঐ সকল কথা শুনিত তবুও সে কিছু লিখিয়া রাখে নাই।
পরমহংস মশাই-এর আসিবার কিছু দিন পরে, ***মশাইকে রামদাদার বাড়িতে আসিতে দেখিলাম। পরমহংস মশাই-এর বাঁ-হাতের পিছন দিকটায়, দেওয়ালের আলমারির কাছে তিনি চুপটি করিয়া বসিয়া থাকিতেন এবং একমনে পরমহংস মশাই কি বলিতেছেন, তাহাই শুনিতে চেষ্টা করিতেন। সুরেশ মিত্তির তাঁহাকে বলিতেন, "কি ***, নোট করবে নাকি?"
পরমহংস মশাইকে এরূপ সময় দু-এক বার বলিতে শুনিয়াছি, "এ সকল কথায় ছাপ মেরো না।" তবে, তিনি কাহার উদ্দেশ্যে এবং কী অর্থে এই কথা বলিতেন, তাহা বলিতে পারি না। হয়তো, ইহার অর্থ এই হইতে পারে যে, এ সকল উচ্চ অঙ্গের কথা, এ সকল কথাকে ভাষায় প্রকাশ করিলে, ইহার ভাব বিকৃত হইয়া যাইবে, কিম্বা হাট-বাজারে এই সকল কথা দিও না, কারণ সাধারণ লোকে এই সকল উচ্চ অঙ্গের কথা বুঝিতে পারিবে না। অপর অর্থ এই হইতে পারে যে, এই সকল কথা ছাপাইয়া পয়সা করিও না; কারণ ব্রহ্মবাণী বেচিয়া পয়সা করা এবং নিজের স্বার্থের জন্য তাহা ব্যবহার করা দূষণীয়। ব্রহ্মবাণী কখনো স্বার্থের জন্য ব্যবহার করিতে নাই, - অযাচিতভাবে ইহা পাইয়াছ অযাচিতভাবে ইহা বিতরণ করিবে - এই হইল সনাতন প্রথা।
1. শ্রীযুত শশীভূষণ চক্রবর্তী, পরে স্বামী রামকৃষ্ণানন্দ।↩
No comments:
Post a Comment