Thursday, April 5, 2018

গুণাতীত অবস্থায়

'গুণ' আর 'বস্তু' কি? - গুণ হইল যার হ্রাস ও বৃদ্ধি হয়। এইজন্য ইহা পরিবর্তনশীল ও অস্থায়ী। বস্তু হইল, যাহার হ্রাস-বৃদ্ধি হয় না। এইজন্য ইহা অপরিবর্তনশীল, নিত্য, শাশ্বত বা সনাতন। আমাদের যাহা কিছু 'জ্ঞান', তাহা শুধু গুণ সম্বন্ধে হইয়া থাকে। গুণের অপর অংশ হইল জ্ঞান। কিন্তু গুণের অতীত এক অবস্থা আছে। এই অবস্থাকে পরমহংস মশাই 'বি-জ্ঞান'-এর অবস্থা বলিতেন। এই অবস্থায় 'অতীন্দ্রিয় জ্ঞান' আসিয়া থাকে। সাধারণ লোকের জ্ঞান হইল - গুণ সম্বন্ধে; গুণাতীত অবস্থা সাধারণ লোকের উপলব্ধি হয় না।

গ্রন্থাদি পাঠ, তর্ক-যুক্তি প্রভৃতি দিয়া যে জ্ঞানলাভ হয়, তাহাকে 'গুণবর্ধক জ্ঞান' বলে। জগতের চক্ষে গুণবর্ধক জ্ঞানই প্রধান বিষয়; আর এইজন্যই তর্ক-বিতর্ক, দ্বন্দ্ব প্রভৃতি হইয়া থাকে। কিন্তু অতীন্দ্রিয় অবস্থায় বা কারণ-শরীরে মনকে লইয়া যাইলে 'গুণাতীত জ্ঞান' প্রতীয়মান হয়। এই গুণাতীত জ্ঞানের কাছে গুণবর্ধক জ্ঞান অতি সামান্য বিষয়। সাধারণ লোকে গুণবর্ধক জ্ঞান দিয়াই পরমহংস মশাই-এর সহিত তর্ক-বিতর্ক করিতে যাইত এবং মনে করিত যে, পরমহংস মশাই একজন নিরক্ষর ব্যক্তি, তাঁহাকে দুইটা প্রচলিত তর্কযুক্তি দিয়া শীঘ্রই অভিভূত করা যাইবে। কিন্তু কারণ-শরীরে মনকে লইয়া যাইতে পারিলে যে গুণাতীত জ্ঞান আসিয়া থাকে, তাহা অনেকের জানা ছিল না। এইজন্য জগৎকে যে অন্যভাবে দেখা যায়, তাহা অতি অল্প সময়ের ভিতরই পরমহংস মশাই প্রতিদ্বন্দ্বীকে বুঝাইয়া দিতেন। তিনি তর্ক-যুক্তি করিতেন না। তর্ক-যুক্তির উৎপত্তি হয় সন্দেহ হইতে এবং সন্দেহেই উহার সমাপ্তি হয়। কিন্তু তিনি কারণ-শরীরে মনকে লইয়া যাওয়ায় ভাবগুলিকে প্রত্যক্ষ দর্শন করিতেন এবং অল্প সময়ের মধ্যেই প্রতিদ্বন্দ্বীকেও তাহা দেখাইয়া দিতেন। ইহাই ছিল তাঁহার এক অতীব আশ্চর্য শক্তি।

No comments:

Post a Comment