পুরানো বাংলার সমাজের অবস্থা অতীব কদর্য ও জঘন্য হইলেও, আমি তাহার কিঞ্চিৎ আভাস দিতেছি। কারণ, সেই সময়কার সমাজের বিষয় অবগত হইলে, শ্রীরামকৃষ্ণের উক্তি ও বাণীসমূহের সার্থকতা বুঝা যাইবে এবং তাঁহার আবির্ভাবের কারণও বুঝা যাইবে।
আমরা যে সময় জন্মগ্রহণ করিয়াছি, সেই সময় পুরানো বাংলার অবসান হইতেছে এবং নূতন বাংলা উঠিতেছে। এইরূপ সামাজিক পরিবর্তনের সময়ে আমরা আসিয়াছি। আমরা সমাজের অতি জঘন্য অবস্থাতে জন্মগ্রহণ করিয়াছি, এবং স্বচক্ষে এমন অনেক বিষয় দেখিয়াছি, যাহা এখনকার সহিত তুলনা করিলে লোকে হাসিবে ও অবজ্ঞা করিবে। আর সমাজের এত দ্রুত পরিবর্তন হইতেছে যে, এখনকার লোকেরা সে-সকল কথা বিশ্বাস করিতেই পারিবে না।
কলিকাতার তখনকার সমাজ বুঝিতে হইলে, দীনবন্ধু মিত্র প্রণীত 'সধবার একাদশী' গ্রন্থখানি পাঠ করা আবশ্যক। ইহা পাঠ করিলে, শিক্ষিত ভদ্রলোকের ভিতর কিরূপ বিপর্যস্ত ভাব আসিয়াছিল, তাহা বেশ বুঝা যায়। তখনকার সমাজের অতি সুন্দর চিত্র ইহাতে আছে। অপর একখানি গ্রন্থ হইল, গিরিশচন্দ্র ঘোষ প্রণীত 'চৈতন্য-লীলা'। ইহাতে জগাই ও মাধাই-এর যে অংশ আছে, তাহা গিরিশচন্দ্র কর্তৃক পর্যবেক্ষিত সমাজের প্রতিচিত্র। আমরাও ঠিক এইরূপ দেখিয়াছি। চৈতন্য-লীলাতে জগাই ও মাধাই-এর যে চরিত্র দেখানো হইয়াছে, তাহা অনেকাংশে গিরিশচন্দ্রের নিজ চরিত্রেরই রূপান্তর। জগাই ও মাধাই হইলেন গিরিশচন্দ্র স্বয়ং ও তাঁহার এক বন্ধু, নাম পরিবর্তিত মাত্র। গিরিশচন্দ্র প্রণীত 'সীতার বিবাহ' গ্রন্থে সমাজের আর একটি আলেখ্য পাওয়া যায়। আমরা ছেলেবেলায় কলিকাতার সমাজের অবস্থা যেরূপ দেখিয়াছি, তাহার নিখুঁত চিত্র ইহাতে পাওয়া যায়।
আলমবাজারের মঠে বড় ঘরটিতে, সন্ধ্যার পর, রাখাল মহারাজ1 ও আমি বসিয়া আছি; এমন সময়, * * মুখুজ্যে ও তাঁহার ছেলে আসিলেন। রাখাল মহারাজ তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, "তুমি তো আগে এত ষণ্ডা ছিলে, তবে এত পটকে গেলে কেন?" * * মুখুজ্যে তাঁহার ছেলের সম্মুখেই নিজ জীবনের পূর্ব কথার উল্লেখ করিয়া বলিলেন, "আর দাদা, ছ-ছ'টা ভৈরবীচক্রে রাতে ঘুরতুম। তখন দক্ষিণেশ্বরে, আলমবাজারে, অনেক ভৈরবীচক্রের আড্ডা ছিল। রাতে পাঁচ-ছ'টা চক্রে ঘুরলে, আর কি শরীর থাকে!" * * মুখুজ্যে তাহার পর অতি জঘন্য কথা বলিতে লাগিলেন, এত জঘন্য যে, তাহা শুনিয়া আমাদের ভিতর একটু ত্রাস আসিতে লাগিল। আমরা উভয়ে চঞ্চল ও উদ্বিগ্ন হইয়া উঠিলাম। কথা থামাইবার জন্য রাখাল মহারাজ বলিলেন, "মুখুজ্যে তোমার ছেলে বসে আছে, কি করছো?"
* * মুখুজ্যে ছেলের দিকে মুখ ফিরাইয়া বলিলেন, "এ সব বাপের কথা - মহাভারতের কথা শুনতে কোনো দোষ নেই।"
শিমলা এবং কাঁসারীপাড়াতেও এইরূপ ভৈরবীচক্রের আড্ডা ছিল। আমরা ছেলেবেলায় এই সকল ভৈরবীচক্রের লোকদিগের চালের ধামা উল্টাইয়া দিয়াছি এবং অনেক মারপিটও করিয়াছি। আমরা নূতন কলিকাতার এক প্রকার প্রথম পর্যায়; এইজন্য, পুরানো হীন আচার-পদ্ধতিসমূহ এত ঘৃণা করিতাম ও ভৈরবীচক্রের লোকদিগকে মারপিট করিতাম। এইরূপ মার দেওয়াতে, ভৈরবীচক্রের দল প্রকাশ্যে কিছু কমিয়াছিল। বোষ্টমী নাম দিলে লোকে বিশেষ আপত্তি করিবে না, এইজন্য, পরে, এই ভৈরবীচক্রগুলি নাম পরিবর্তন করিয়া 'শচীমা-ভজা' দল বলিয়া আত্মপরিচয় দিত। এই সব আখড়াগুলিতে অতি বীভৎস কার্য হইত।
মাতালের কথা তো বলিবারই নয়। সেই সময় শিক্ষিত ভদ্রলোকদিগের ভিতর মদ খাওয়ার প্রথাটা খুব চলিয়াছিল। শিমলা ছিল 'অষ্ট-বসুর পাড়া',2 অর্থাৎ, বিখ্যাত মাতালের পাড়া। রাখাল3 ও আমরা সকলে, শনিবার সন্ধ্যার সময় লাঠিসোঁটা লইয়া তৈয়ার হইতাম, তাহার পর, মাতালদের ঠেঙানো শুরু হইত। রাস্তার দু-ধারে তখন পগার বা নর্দমা ছিল। দু-একটি ধাঙড়ে উহা পরিষ্কার করিত। সেই পগারের ভিতর মাতালদের শুইয়া থাকিবার জায়গা ছিল। রবিবার দিন মাতালেরা রাস্তার ধারের এই পগারে, পাঁকের ভিতর, মাথায় ধাঙড়দের ঝোড়া দিয়া বালিশ করিয়া শুইয়া থাকিত; সোমবার সকালে যে যার কাজে যাইত। তখন প্রচলিত কথাই ছিল:
"হায় রে মজা শনিবার
বড় মজার রবিবার!"
পাঁকে শুইয়া থাকিবার সময় যদি পাহারাওলা আসিত, তাহা হইলে ঐ ভদ্রলোক মাতালেরা বলিত, "বাবা, এ police jurisdiction নয় যে ধরবে, এ municipal jurisdiction" - অর্থাৎ এ (পগারটা) পুলিসের এলাকা নয় যে ধরবে, এ মিউনিসিপ্যাল এলাকা।
কাদামাটির কথা কিছু জানা আবশ্যক। দুর্গাপূজার নবমীর দিন, পাঁঠা বা মহিষ বলি দিয়া, তাহার মুণ্ডটি কাদা মাখাইয়া মাথায় করিয়া লইয়া, সকলে রাস্তায় বাহির হইত; আর বৃদ্ধ পিতামহ তাঁহার পৈতৃক খাতাখানি লইয়া অশ্লীল গান শুরু করিতেন, এবং তাঁহার পুত্রপৌত্রাদি সকলে সমস্বরে সেই গান গাহিতে থাকিত। এখন সে সকল কুৎসিত বিষয় স্মরণ করিলে গা শিহরিয়া উঠে! কিন্তু ইহাই ছিল তখনকার সমাজের প্রথা।
তাহার পর হইল, পাঁচালি ও তরজার গান। সে সকল গান অতি কদর্য ও অশ্লীল। কিন্তু তখনকার লোকেরা হাসিমুখে, আনন্দ করিয়া, সেই সকল গান শুনিত। এখন সে সকল গান গাহিলে, সম্ভবতঃ পুলিসে ধরিবে। কলিকাতার সমাজে তখন এত দূর অবনতি হইয়াছিল।
লোক মরিলে, কেহ তাহাকে দাহ করিতে যাইত না। এমন কি, যে বিবাহ করে নাই, সেও বলিয়া বসিত যে, তাহার স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা, সেইজন্য সে মড়া ছুঁইবে না ও দাহ করিতে যাইতে পারিবে না। বাড়ির পাশে লোক মরিলে, মড়া উঠিত না। এমন কি জ্ঞাতি মরিলেও সহজে কেহ সঙ্গে যাইত না। যাহাকে সেবা ও শুশ্রূষার ভাব বলে, সে সব কিছুই ছিল না। কোনো রকমে নিজের জাত বাঁচাইলেই হইল। এ সব কথা সত্য, আমি স্বচক্ষে এ সব দেখিয়াছি।
সর্ব বিষয়ে প্রবঞ্চনা করা, মিথ্যা ব্যবহার করা, জালিয়াতি করা, বিধবাকে ঠকানো, প্রভৃতি ছিল বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক। লোকের বিষয়-সম্পত্তি জাল করিয়া লওয়া, ঠকাইয়া লওয়া - এই সব ছিল বাহাদুরির কার্য। ইহা ব্যতীত লোকে যে আরো কত গর্হিত কার্য করিত, তাহা বলিবার নয়। সকল কথা এ স্থলে বলাও উচিত নয়।
মেয়েদের আট বৎসর হইতে নয় বৎসরের মধ্যে বিবাহ হইত। ছেলেদেরও বিবাহ হওয়া চাই-ই। ষোল-সতেরো বৎসরের ছেলে বিবাহ না করিলে জাত যাইবে, এমন কি যেন আকাশ ভাঙিয়া পড়িবে! আমার নিজের বেলায় ঠিক এইরূপ হইয়াছিল। আমি যখন সতেরো বৎসরে বিবাহ করিলাম না, তখন পাড়ায় এক মহা হুলুস্থুল পড়িয়া গেল। ভদ্রলোকেরা তো সেজন্য নিন্দা করিলেনই, এমন কি আমাদের বুড়ী কাদী হাড়িনী, যে আমাদের বাড়ির ময়লা পরিষ্কার করিত, সেও আসিয়া আমাকে ভর্ৎসনা করিয়া গেল। এখন কিন্তু শহরে হাজার হাজার ছেলে বিবাহ করিতেছে না। আর, এখন মেয়েরাও অবিবাহিতা থাকে। এখন মেয়েদের রাস্তায় বাহির হওয়া গা সওয়া হইয়া গিয়াছে। মেয়েরা তখন পালকি করিয়া রাস্তায় বাহির হইত; পালকির মাথায় ঘেরাটোপ দেওয়া থাকিত। গঙ্গাস্নান করিবার সময় বেহারারা পালকিখানি গঙ্গার জলের উপর ধরিত এবং পালকির নীচুকার বেতের ছাউনির ভিতর দিয়া জল ঢুকিলে মেয়েরা ভিতরে বসিয়া স্নান করিত।
বংশ ও জাত বিষয়ে অতি কঠোর নিয়ম ছিল। নিমন্ত্রণ ও আহার বিষয়েও ঘোর সমস্যা ছিল। নিমন্ত্রণ করিতে যাইলে, প্রথমে সাত পুরুষের পরিচয় দিতে হইত, তাহার পর, কে নিমন্ত্রণ করিতে আসিয়াছে, সে নিমন্ত্রণ করিবার উপযুক্ত কি না, তাহার মারফৎ নিমন্ত্রণ গ্রহণ করা যাইতে পারে কি না, এবং যে নিমন্ত্রণ করিতে পাঠাইয়াছে, তাহার বাড়িতে খাওয়া যাইতে পারে কি না - এই সব বিষয় লইয়া মহা গণ্ডগোল হইত। আমি ছেলেবেলায় নিমন্ত্রণ করিতে গিয়া বৃদ্ধদের হাতে পড়িয়া কয়েক বার এইরূপ বিপন্ন হইয়াছিলাম; শেষে, রাগিয়া চলিয়া আসি।
ভট্টাচার্য ব্রাহ্মণ কখনো ভাগবতের কথা শুনিতে যাইতেন না; ইহাতে তাঁহার মানহানি হইত। ভাগবত গ্রন্থ তখন হাতে-লেখা পুঁথি ছিল। এমন কি, পুঁথির একখানি পাতা যদি দৈবাৎ খুলিয়া পড়িয়া যাইত তো, ভট্টাচার্য ব্রাহ্মণ চিমটা দিয়া ধরিয়া পাতাটা তুলিয়া রাখিতেন এবং ভাগবতের পাতা ছুঁইয়াছেন বলিয়া, হাত ধুইয়া, ইষ্টনাম জপ করিতেন। গোঁসাই-এর সহিত কোনো ভট্টাচার্য ব্রাহ্মণ এক পঙ্ক্তিতে আহার করিতেন না; কোনো শ্রাদ্ধবাড়িতে গোঁসাই-এর সহিত এক আসনে বসিতেন না। আবার, গোঁড়া বৈষ্ণবেরা দুর্গাঠাকুরকে বলিতেন, 'হাতিমুখোর মা'; বেলপাতাকে বলিতেন 'তেফর্কা পাতা'; কালীঠাকুরকে বলিতেন, 'মসী'। এইরূপ গোঁড়ামির অনেক পুরানো গল্প আছে।
অনেক সময় লোকেরা তখন ইংরাজী ও বাংলা মিশাইয়া কথা বলিত। বাংলায় চিঠি লেখা অতি অসভ্যতা বলিয়া বিবেচিত হইত। "সধবার একাদশী"-তে নিমচাঁদ তাই বলিতেছে: I read English, write English, talk English, speechify in English, think in English, dream in English... আর এক স্থানে নিমচাঁদ বলিতেছে: "তুমি পড়েছ দাতাকর্ণ, তোমার বাপ পড়েছে কাশীদাস। তোমার হাতে মেঘনাদ, কাঠুরের হাতে মাণিক - মাইকেল দাদা বাঙ্গলার মিল্টন॥"
প্রণাম করা ছিল কু-সংস্কারের বিষয়। কেহ বা ইংরাজীতে 'গুড মর্নিং' বলিয়া কার্য সমাধা করিত, কেহ বা বিশেষ ভদ্রতা অনুযায়ী ডান হাতের তর্জনীটি এক বার কপালে তুলিত, ইহাই ছিল তখনকার সভ্যতার পরিচয়। শ্রাদ্ধাদি করা হইল কু-সংস্কারের কার্য, ইহার কোন দরকার নাই! দেবদেবীর পূজা করাও যেন অতীব গর্হিত কার্য! ঠাকুর-দেবতার কথা শোনাও ছিল কু-সংস্কার! কালীপূজার সহিত ভৈরবীচক্রের বিশেষ সম্পর্ক ছিল, এইজন্য, কালীঠাকুর অনেকের কাছে বিশেষ করিয়া বর্জনীয় ছিল। আর, সরস্বতী ও কার্তিক পূজা ছিল বেশ্যাপল্লীর পূজা, ভদ্রলোকদিগের এই সকল পূজা করা ছিল অবিধেয়।
ধর্ম-উপদেষ্টা নামে, কথক ঠাকুর ও গাইন ঠাকুর কথকতা ও পালাগান করিত। বৃদ্ধ ও বৃদ্ধারা তাহাদের কথকতা ও পালাগান শুনিতে যাইতেন; অন্যান্য ভদ্রলোকরা কখনো যাইতেন না। কথাবার্তার প্রচলিত মাত্রাই ছিল - 'এ যেন কথকের কথা', অর্থাৎ বিশ্বাসযোগ্য নয়।
ধর্মগ্রন্থ যাহা কিছু ছিল এবং ধর্ম সম্বন্ধে যাহা কিছু শুনিতে পাইতাম, তাহা হইল - যীশুখ্রীষ্টের গল্পবিষয়ক। পাদরীরা, এই সুযোগে, রাস্তার মোড়ে মোড়ে ও বাজারে যাইয়া সকলকে যীশুর গল্প শুনাইত। বাঙালি পাদরীরা, হেদোর4 ধারে, কেষ্ট বন্দ্যোর5 গির্জার কোণটিতে, রবিবার সকালে যীশুখ্রীষ্টের কথা বলিত, আর হিন্দু দেবদেবীদিগকে গাল পাড়িত। দাদা6 একদিন বেলা নয়টার সময় ঐখান দিয়া আসিতেছিল। সে খানিকক্ষণ পাদরীদের বক্তৃতা শুনিয়া তাহাদের সহিত তর্ক-বিতর্ক করিয়া ঝগড়া শুরু করিল। ঝগড়াটা ক্রমে বাড়িয়া উঠিল। দুই দিকে বেশ দল পাকিল; এমন কি, মারামারি হইবার উপক্রম হইল। পরে, দুই দল ঠাণ্ডা হইলে, দাদা চলিয়া আসিল এবং দুই দলের লোকরাও রাগিয়া চলিয়া গেল।
এইরূপে খ্রীষ্টান পাদরীরা সকলকে খ্রীষ্টান করিবার জন্য বিশেষ প্রয়াস পাইতে লাগিল। ইংরেজ পাদরী ও সহকারী দেশীয় পাদরীর সংখ্যা খুব অধিক বাড়িয়া গিয়াছিল। তাহারা গলির মোড়ে মোড়ে, বাজারে ও নানা স্থানে যাইয়া হিন্দুধর্ম ও হিন্দু-সমাজের কুৎসা ও অসারতা প্রচার করিতে লাগিল। পাদরীরা বলিত যে, গঙ্গাস্নান করা কু-সংস্কার; তেল মাখিয়া স্নান করা কু-সংস্কার; দাড়ি কামানো কু-সংস্কার। - এইজন্য, আমরা দাড়ি কামাইতাম না। - তাহারা বলিত, হিন্দুদের যাহা কিছু আছে, তাহাই কু-সংস্কার; শুধু তাহারা যাহা বলিবে, তাহাই যুক্তিসঙ্গত। হিন্দুধর্ম মানেই হইল, কু-সংস্কার, হিন্দুধর্ম মানেই হইল, যাহা কিছু সব ভুল!
হিন্দুধর্ম যে কি, তাহা অনেকেই তখন বুঝিত না। হিন্দুধর্ম সম্বন্ধে কাহারো বিশেষ কিছু পড়া-শুনা ছিল না, এবং হিন্দুধর্মের বিষয় কোনো গ্রন্থও তখন পাওয়া যাইত না। এইজন্য, পাদরীদের কথার উত্তর দেওয়া দুঃসাধ্য ছিল। আবার, পাদরীরা ছিল ইংরেজ। পাদরীদের কিছু বলিলে, পাছে হাঙ্গামা হয়, সেইজন্য সাহস করিয়া কেহ বিশেষ কিছু বলিতে পারিত না। নরেন্দ্রনাথ যে সাহস করিয়া হেদোর ধারে পাদরীদের সহিত তর্ক-বিতর্ক করিয়াছিল, সেরূপ সকলে পারিত না। য়ুরোপীয় রাজনীতিক্ষেত্রে একটি উক্তি আছে: First send the missionaries, then send the merchants and last send the army. ইহার অর্থ এই যে, একটি দেশ জয় করিতে হইলে, প্রথমে ধর্ম-প্রচারকদিগকে পাঠাইবে, পরে বণিকদিগকে এবং সর্বশেষে সৈন্যদলকে পাঠাইবে। ভারতবর্ষেও ঠিক সেইরূপ হইয়াছিল। এইজন্য, পাদরীদিগকে আমরা সশঙ্কচিত্তে দেখিতাম; শ্রদ্ধা-ভক্তির কথা নয়, অতিশয় ভয় করিতাম; কারণ ভাবিতাম, তাহারা কখন কি বিপত্তি আনিয়া দিবে? গ্রাম্য ভাষায় তখন একটি কথা প্রচলিত ছিল:
'জাত মাল্লে পাদরী এসে
প্যাট্ মাল্লে নীল বাঁদরে।'
অর্থাৎ পাদরীরা আসিয়া জাত ও ধর্ম নষ্ট করিল, এবং নীলকরেরা উদরের অন্ন হরণ করিল।
শ্রীচৈতন্য ও বৈষ্ণব-ধর্মের বিষয় আমরা বিশেষ কিছু জানিতাম না। গীতা ও উপনিষদের নাম কেহ শুনে নাই। চণ্ডীপাঠ মাত্র কয়েকজন ভট্টাচার্য ব্রাহ্মণ করিতেন। ত্রৈলোক্য সান্যাল মশাই7 শ্রীচৈতন্যের বিষয় একটি গ্রন্থ8 লিখিয়াছিলেন। আমরা শ্রীচৈতন্য সম্বন্ধে প্রথম এই গ্রন্থ পাঠ করি। 'চৈতন্য-চরিতামৃত'9 নামে যে কোনো গ্রন্থ আছে এ বিষয় আমরা তখন কিছুই জানিতাম না। পাদরীরা বাইবেলগুলি বাড়ি বাড়ি দিয়া যাইত, সেইটাই আমাদের কতকটা পড়া ছিল মাত্র।
আবার, এক মত উঠিল কোঁতিষ্টদের। ইহাদের মত হইল যে, ঈশ্বরাদি কিছুই নাই। ইহাদের প্রত্যক্ষবাদী - Positivist বলা হইত। ব্রাহ্ম-ধর্ম তবু একটা ধর্মের ভিতর ছিল, কিন্তু প্রত্যক্ষবাদীরা সব উড়াইয়া দিত।
কলিকাতার যখন এইরূপ অবস্থা, তখন কেশববাবু10 বক্তৃতা দিতে লাগিলেন। কেশববাবুর বিষয় কিছু বলিতে হইলে ইহা প্রথমেই বলা আবশ্যক যে, তাঁহার চেহারা ও মুখশ্রী কার্যকারিতা বা সফলতা লাভে তাঁহাকে বারো আনা ভাগ সাহায্য করিত, এবং বাকি চার আনা ভাগ সাহায্য করিত তাঁহার বাক্যবিন্যাস। আলেখ্যে11 তাঁহার যে মূর্তি দেখা যায়, তাহা শুধু একভাব হইতে দেখানো হইয়াছে, কিন্তু কেশববাবুর জীবিত অবস্থায় চেহারা আরো সুন্দর ও মাধুর্যপূর্ণ ছিল। চোখের চাহনী ও মুখভঙ্গী - ভক্তি, ঈশ্বর-বিশ্বাস ও ওজস্বিতার ভাবে পরিপূর্ণ ছিল। কেশববাবুকে দেখিয়াছেন এমন কোনো লোক যদি আজও জীবিত থাকেন তো, তিনি নিশ্চয়ই বলিবেন যে, কেশববাবুর চেহারাতে একটি বিশেষ লাবণ্য বা মাধুর্য ছিল, এবং সাধারণ লোক হইতে তাঁহার চেহারার অনেক অংশে প্রভেদ ছিল।
পাদরীরা যেমন পাড়ায় পাড়ায় গিয়া বক্তৃতা দিত কেশববাবুও তেমনি পাড়ায় পাড়ায় গিয়া, মধ্যে মধ্যে সভা করিয়া, হিন্দুধর্ম প্রচার করিতে লাগিলেন। কেশববাবু প্রথম অবস্থায় ইংরাজীতে বক্তৃতা দিতেন, কিন্তু কিছু দিন পর হইতে বাংলায় বক্তৃতা দেওয়া আরম্ভ করিলেন। আমরা কেশববাবুর নিকট প্রথম বাংলায় বক্তৃতা শুনিয়াছিলাম; তাহা নিন্দনীয় নয়। শিমলাতে মনোমোহনদার12 এবং নন্দ চৌধুরীর বাড়িতে এক সময়ে তিনি সভা করিয়াছিলেন: সমস্ত দেশটা যাহাতে খ্রীষ্টান না হইয়া যায়, তাহার জন্য তিনি বিশেষ প্রয়াস পাইতে লাগিলেন। প্রথম অবস্থায় তিনি খ্রীষ্টধর্ম ও হিন্দুধর্মের মাঝামাঝি একটি সেতু তৈয়ার করিতে চেষ্টা করিলেন। যীশুকে তিনি Oriental Christ - প্রাচ্যদেশীয় যীশু ও তপস্বী যীশু করিয়া দেখাইতে লাগিলেন। তিনি কতকগুলি বক্তৃতা দিলেন। বক্তৃতাগুলিতে তিনি এইরূপ মত প্রকাশ করিলেন যে, বিলাতী হ্যাট-কোট ত্যাগ করাইয়া দেশী যীশু করো এবং যীশুবিহীন যীশুর ধর্ম মানো। কেশববাবু হিন্দুধর্মের বিগ্রহ-পূজাদি ত্যাগ করিলেন, কিন্তু ভক্তির পথ অবলম্বন করিলেন। ইহাতে শিক্ষিত লোকের ভিতর খ্রীষ্টান হওয়া কিছু পরিমাণে কমিয়াছিল। ব্রাহ্মধর্মে কিছু পরিমাণ খ্রীষ্টধর্ম ও কিছু পরিমাণ হিন্দুধর্মের আচার-পদ্ধতি মিশানো ছিল। কেশববাবু তাঁহার ব্রাহ্ম মত প্রচার করিতে লাগিলেন। অধিকাংশ শিক্ষিত লোকই তখন প্রকাশ্যে বা অপ্রকাশ্যে কেশববাবুর দলে যাইতে লাগিলেন। আমরাও সমাজ-সংস্কার বিষয়ে তাঁহার অনুগত হইলাম। কেশববাবুর দলে যোগদান করায়, যদিও মদ খাওয়া ও অন্যান্য সামাজিক দুর্নীতি হইতে আমরা অন্য দিকে যাইলাম; কিন্তু এক দিকে নিরাকার ব্রহ্ম যে কি, তাহা কিছুই বুঝিতাম না, এবং অপর দিকে, ঠাকুর-দেবতা ও পুরানো আচার-পদ্ধতিও কিছু মানিতাম না।
সমাজের এইরূপ অবস্থাতে আমাদের শৈশবকাল কাটিয়াছিল। সমাজে তখন নাস্তিকতা ও বিশৃঙ্খলতার ভাব আসিয়াছিল। অনেক শিক্ষিত যুবক এইরূপ অনিশ্চিত অবস্থায় থাকিয়া, শেষে খ্রীষ্টান হইয়াছিল। কিন্তু আমরা অধিকাংশ যুবক খ্রীষ্টধর্ম পছন্দ করিতাম না ও হিন্দুধর্মও মানিতাম না। আমরা পুরানো কিছু মানিতাম না; নূতন যে কি করিতে হইবে, তাহাও জানিতাম না। আমরা কোনটা যে ধরিব, তাহা তখন স্থির করিতে পারিতেছিলাম না; মহা অশান্তির ভাব আসিল। যুবকদের মনে প্রচণ্ড আগুন জ্বলিল। কি করিতে হইবে; তাহা কেহই বুঝিতে পারিতেছিল না। পুরানো বাংলা তখন চলিয়া যাইতেছিল এবং নূতন বাংলা আসিতেছিল।
কেশববাবু বাংলাদেশে প্রথম নব ভাব জাগ্রত করিলেন। তিনি, 'ব্যান্ড অভ্ হোপ' (Band of Hope) নামে একটি দল গঠন করিলেন। দলের লোকেরা মদ খাইবে না; এমন কি, তামাকও খাইবে না। নরেন্দ্রনাথ এই ব্যান্ড অভ্ হোপ বা 'আশার দল'-এ নাম লিখাইয়াছিল। তবে, এই দলের ভিতর কলিকাতার যুবক তত বেশী ছিল না; পূর্ববঙ্গের অনেক লোক ছিল।
এক দিন নরেন্দ্রনাথ তামাক খাইতেছে, এমন সময়, প্রিয় মল্লিক নামে কেশববাবুর সমাজভুক্ত জনৈক যুবক আসিয়া বলিল "নরেন, তুমি কি করলে, তামাক খেলে?" - তামাক খাওয়াটা যেন একটা মহা গর্হিত কাজ! নরেন্দ্রনাথ হাসিয়া বলিল, "আরে, ব্যান্ড অভ্ হোপ-এর দলে থাকলেও তামাক খেতে দোষ নেই।" এই বলিয়া কথাটি ঠাট্টা করিয়া উড়াইয়া দিল।
এক দিকে যেমন মাতালের দল উঠিল, অপর দিকে তেমনি এই ব্যান্ড অভ্ হোপ-এর দল উঠিল। ব্যান্ড অভ্ হোপ-এর দলের কথা ছিল: Touch not, taste not, smell not, drink not anything that intoxicates the brain, - অর্থাৎ, যাহাতে মস্তিষ্ক উত্তেজিত হয়, এমন কোনো জিনিস স্পর্শ, আস্বাদন, আঘ্রাণ বা পান করিও না। এইরূপ দুই দলে দ্বন্দ্ব চলিতে লাগিল।
কেশববাবু 'নব বৃন্দাবন'13 নামে একখানি নাটক প্রণয়ন করান। গ্রন্থখানি, সম্ভবতঃ মুদ্রিত হয় নাই; কারণ বাজারে আমরা কখনো উহা দেখি নাই। এই নব-বৃন্দাবন অভিনয়ে নরেন্দ্রনাথ কয়েক বার পাহাড়ী বাবার অংশ গ্রহণ করিয়াছিল। নরেন্দ্রনাথকে এক ব্যক্তি এক বার জিজ্ঞাসা করিয়াছিল, "নরেন, পাহাড়ী বাবার ভূমিকায় কি করতে হয়?" নরেন্দ্রনাথ হাসিয়া বলিল, "চুপ করে বসে কেবল ধ্যান করতে হয়।"
যাহা হউক, নব-বৃন্দাবন অভিনয় কয়েক বৎসর বেশ একটা হুজুক আনিয়াছিল; তবে, এই অভিনয় কেশববাবুর সমাজভুক্তদিগের মধ্যে হইত, বাহিরে হইত না।
বিদ্যাসাগর মশাই14 বিধবা-বিবাহ প্রচলন করিলেন। কেশববাবু ব্রাহ্ম বিবাহ-বিধি অনুযায়ী অসবর্ণ-বিবাহ প্রচলন করিবার চেষ্টা করিলেন। কেশববাবু বালিকাদিগের জন্য বিদ্যালয়ও স্থাপন করিলেন; কারণ, এই সময় পাদরীরা দু-একটি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করিয়াছিল। সাধারণতঃ স্ত্রীলোকেরা ঘোমটা-ঘেরা ও টোপ-ঢাকা হইয়া বাহির হইত। সেই ভাবটা কেশববাবু দূর করিবার চেষ্টা করিয়াছিলেন। কেশববাবু স্ত্রীলোকদিগকে সমাজে15 বসিতে দিতেন, অর্থাৎ স্ত্রীলোকদিগের বাড়ির বাহির হওয়া সমর্থন করিতেন। কেশববাবু তখনকার সমাজের নানা প্রকার সংস্কার করিবার প্রয়াস পাইয়াছিলেন। কিন্তু সেই সময় তাঁহার সংস্কার-প্রথা তত ফলদায়ক হয় নাই, কারণ, সমাজ তখন একেবারে পচিয়া গিয়াছিল।
পণ্ডিত গৌরগোবিন্দ রায় কেশববাবুর বিশেষ সহায় হইয়াছিলেন। তিনি ভাগবতের অতি সুন্দর ব্যাখ্যা করিতেন। সাধু অঘোরনাথ কেশববাবুর এক তাপস সহকারী ছিলেন। তিনি কয়েক বৎসর আমাদের সাত নম্বর রামতনু বসু গলির বাড়ি ভাড়া করিয়া বাস করিয়াছিলেন। এইজন্য, তাঁহাকে ঘনিষ্ঠভাবে জানিতাম; তিনি যথার্থই একজন তাপস ছিলেন। প্রতাপ মজুমদার, বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী, উমেশ দত্ত, শিবনাথ শাস্ত্রী, প্রভৃতি সকলে প্রথম অবস্থায় কেশববাবুর সংস্পর্শে আসিয়া নব ভাবে উদ্দীপ্ত হইয়াছিলেন। অবশেষে, শাস্ত্রী মশাই, গোঁসাইজী, উমেশ দত্ত, নগেন চট্টোপাধ্যায়, প্রভৃতি সকলে পৃথক হইয়া 'সাধারণ-সমাজ' স্থাপন করেন; কিন্তু তাহা হইলেও, কেশববাবুর প্রতি সকলের শ্রদ্ধা-ভক্তি পূর্বের ন্যায় অটল ছিল। আমরাও সকলে তাঁহাকে বিশেষ শ্রদ্ধা-ভক্তি করিতাম।
সাধারণ-সমাজ গঠিত হইলে পর, আমরা সাধারণ-সমাজে যাইতে লাগিলাম। সেখানে বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী, শিবনাথ শাস্ত্রী, নগেন চট্টোপাধ্যায়, উমেশ দত্ত, প্রভৃতি কয়েক জনের বক্তৃতা শুনিতাম। এইরূপে, ক্রমে যুবকদিগের ভিতর ব্রাহ্মধর্মের ভাব জাগিয়া উঠিল। পরে যাঁহারা পরমহংস মশাই16-এর কাছে গিয়াছিলেন তাঁহাদের মধ্যে অধিকাংশ ব্যক্তিই প্রথমে সাধারণ-সমাজে যাতায়াত করিতেন।
যুবা শরৎ17 বিগ্রহপূজা বা মূর্তিপূজার বিশেষ বিরোধী ছিল। কারণ, তখন সে সাধারণ-সমাজে যাতায়াত করিত। বরানগর মঠে, এক দিন বিকালবেলা, আমার সঙ্গে তাহার এ বিষয়ে অনেক কথা হইয়াছিল।
বেলুড় মঠে, এক দিন সারদানন্দ আমায় বলিলেন, "আচ্ছা, মনে আছে তোমার, গোস্বামী মশাই করুণ স্বরে বলতেন - হে শ্রীহরি, হে শ্রীহরি, হে শ্রীহরি!" - গোস্বামী মশাই তিন বার তিন প্রকার কণ্ঠস্বর করিয়া অতি কাতর ও করুণভাবে বলিতেন, "হে শ্রীহরি, হে শ্রীহরি, হে শ্রীহরি!" সে বাণী শুনিলে হৃদয় জুড়াইত। সে কণ্ঠস্বর, সে শব্দ, সে বাণী এখনো প্রাণে লাগিয়া রহিয়াছে। আর কাহারো এমন কাতর ও করুণ কণ্ঠস্বর শুনি নাই।
তারকনাথও18 বিশেষরূপে ব্রাহ্ম-সমাজের অন্তর্ভুক্ত ছিল। তারকনাথ নিজ মনে সর্বদাই ব্রহ্ম-সঙ্গীত গাহিতে ভালবাসিত।
নরেন্দ্রনাথ ধ্রুপদ গান ভাল করিয়া শিখিলে পর, সাধারণ-সমাজে উপাসনার দিন, রাত্রে, মাঝে মাঝে, ধ্রুপদ গান গাহিত। ব্রহ্ম-সঙ্গীতেও সে অল্প বয়সে খ্যাতিলাভ করিয়াছিল। সাধারণ-সমাজের কর্তৃপক্ষের সহিত নরেন্দ্রনাথের বিশেষ ঘনিষ্ঠতা ছিল। শিবনাথ শাস্ত্রী মশাই এক এক দিন সকালে আমাদের গৌরমোহন মুখার্জী ষ্ট্রীটের বাড়ির দরজায় আসিয়া আমায় ডাকিয়া বলিতেন, - তোমার দাদা, নরেনকে, এই সব কথা বলো, ওখানে যেতে বলো, ইত্যাদি। তিনি কয়েক বার আসিয়া আমাকে এইরূপ বলিয়া গিয়াছিলেন স্মরণ আছে।
এই সময়, নরেন্দ্রনাথ বিশেষ কিছু হিন্দু ধর্মগ্রন্থ না পাওয়ায়, হার্বার্ট স্পেনসার ও ষ্টুয়ার্ট মিল-এর গ্রন্থসমূহ অত্যধিক পাঠ করিতে লাগিল। নরেন্দ্রনাথ, স্পেনসার ও মিল-এর গ্রন্থ পাঠ করিয়া সকলের সহিত খুব তর্ক করিত। এমন কি, পাদরীদিগের সহিত সমানভাবে তর্ক করিত। Daredevilry - ডানপিটেমি করা ছিল শিমলার ছেলেদের বিশেষ spirit বা ধাত। তাহারা কাহাকেও ভয়-ডর করিত না, কাহারো খাতির রাখিত না, তেড়েফুঁড়ে মুখের উপর কথা বলিত।
1. স্বামী ব্রহ্মানন্দ।↩
2. শিমলা অঞ্চলে সম্ভ্রান্ত বসু মহাশয়গণ বাস করিতেন। বসু মহাশয়গণের আটজন একত্র নেশা করিতেন। একটি মাটির গামলাতে মদ ঢালিয়া, উহার চারিদিকে ঘেরিয়া বসিয়া, এই আটজন বন্ধু মুখে খাগড়ার নল দিয়া মদ টানিয়া পান করিতেন। মদের গামলাতে একটি গোলাপ ফুল দেওয়া থাকিত। যিনি ফুলটিকে নিজ নলের মুখে সকলের পূর্বে টানিয়া আনিতে পারিতেন, তিনিই এই পানমণ্ডলীর অধিপতি বা চক্রেশ্বর বলিয়া স্বীকৃত হইতেন।↩
3. শ্রীযুত রাখালচন্দ্র ঘোষ, পরবর্তী কালে, স্বামী ব্রহ্মানন্দ।↩
4. কর্নওয়ালিস স্কোয়ার (বর্তমান নাম - আজাদ হিন্দ্ বাগ)।↩
5. রেভারেন্ড কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়।↩
6. গ্রন্থকারের জ্যেষ্ঠ সহোদর শ্রীযুত নরেন্দ্রনাথ দত্ত, পরবর্তী কালে স্বামী বিবেকানন্দ।↩
7. শ্রীযুত ত্রৈলোক্যনাথ সান্যাল। চিরঞ্জীব শর্মা ও প্রেমদাস নামেও ইনি পরিচিত।↩
8. ভক্তিচৈতন্যচন্দ্রিকা।↩
9. শ্রীকৃষ্ণদাস কবিরাজ বিরচিত শ্রীচৈতন্য-চরিতামৃত।↩
10. ব্রহ্মানন্দ কেশবচন্দ্র সেন।↩
11. কলিকাতার অ্যালবার্ট ইনস্টিটিউট-এ রক্ষিত ব্রহ্মানন্দ কেশবচন্দ্র সেনের তৈলচিত্র।↩
12. শ্রীযুত মনোমোহন মিত্র, শ্রীযুত রামচন্দ্র দত্তের মাসতুতো ভাই।↩
13. নাটকটির প্রকৃত রচয়িতা শ্রীযুক্ত ত্রৈলোক্যনাথ সান্যাল।↩
14. পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।↩
15. নব-বিধান-সমাজ।↩
16. শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের দেহধারণকালে তাঁহাকে সকলে 'পরমহংস মশাই' বলিতেন।↩
17. শ্রীযুত শরৎচন্দ্র চক্রবর্তী, উত্তরকালে স্বামী সারদানন্দ।↩
18. শ্রীযুত তারকনাথ ঘোষাল, উত্তরকালে স্বামী শিবানন্দ।↩